Header Ads

Header ADS

গাভীর ওলান প্রদাহ, বাটে রক্ত আসা, বাটের ছিদ্র বন্ধ হওয়া রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

গাভীর ওলান প্রদাহ (Mastitis).
বাটে রক্ত আসা (Bleeding from teat).
বাটের ছিদ্র বন্ধ থাকা (Teat block).

গাভীর ওলান প্রদাহ (Mastitis).

গাভীর ওলানের টিস্যুর প্রদাহকে ওলান প্রদাহ (Mastitis) রোগ বলে। ম্যাসটাইটিস সাধারনতঃ ২ প্রকার, যথাঃ (NEKROTIK এবং HEMOREGIK)। এ রোগের কারনে গাভীর দুধ কমে যাওয়া থেকে শুরু করে চিরতরে ওলান/ বাট নষ্ট/বন্ধ হয়ে যায় এমন কি গাভী মারাও যেতে পারে। প্রধানত ২২ থেকে ৫৬ প্রকার ব্যাকটেরিয়া, কয়েক প্রকার ছত্রাক ও মাইকোপ্লাজমা দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। বিশেষ করে অধিক দুধ উৎপাদনশীল গাভী এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।

Mastitis এর কারন
> প্রথমত স্ট্রেপটোকক্কাই ও স্টেফাইলোকক্কাই গ্রাম পজেটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া ওলানে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে। পরবর্তিতে আঘাত জনিত কারনে (বাছুরের দাতের মাধ্যমে, এুটিপুর্ন দহন ইত্যাদি) ক্ষতের সৃষ্টি হলে ওলানে কতিপয় এই জীবানুর বংশ বিস্তার ঘটে।
> ওলানের বাট সরাসরি নোংরা থেকে, অথবা দোহন কারীর হাত হতে এ রোগ হতে পারে।
> ওলানের ছিদ্র দিয়ে জীবানু প্রবেশ করলে এবং হঠাৎ দুধ দহন বন্ধ করলে এ রোগ হয়।
> অধিক দুধের চাপের কারনে দুধ জমাট বেধে এ রোগের সৃষ্টি হয়।

Mastitis এর লক্ষন
> প্রধান লক্ষন হলো ওলান ফুলে যাওয়া।
> ওলানে ব্যাথা হয় এবং গরম হয়ে থাকে।
> বাছুরকে দুধ খেতে বাধা দেয়।
> আক্রান্ত বাট দিয়ে ঘোলাটে দুধ, ছানা, পুজ, পচা রক্ত ও পানি বের হয়।
> ওলানের আক্রান্ত দিক শক্ত হয় ও হাত দিতে দেয় না।
> ওলানের অংশ বিশেষ একদিকে বাকা হয়ে যায়।
> নাভীর নিচে পানি জমা হয়ে ইডিমা তৈরি হয়।

রোগ নির্নয়ঃ-
> দুধের বর্ণ, গন্ধ, ও ঘনত্ব, ল্যাবে পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ নির্নয় করা যায়।
> স্ট্রিপ কাপ পদ্ধতিতেও এ রোগ নির্নয় করা যায়।

চিকিৎসার শতভাগ সফলতার শর্তঃ-
*** Mastitis রোগের চিকিৎসার সফলতা নির্ভর করে রোগ সৃষ্টিকারী জীবানুর প্রকারভেদ, আক্রান্তের তীব্রতা ও উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচনের উপর।
*** মনে রাখবেন এ রোগের চিকিৎসা যত দ্রুত হবে চিকিৎসার ফলাফলও তত সুফল হবে।
*** দেরিতে চিকিৎসা শুরু করলে ওলানের মারাত্নক ক্ষতিসহ একেবারে বাট বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
*** অতপরঃ এই রোগের লক্ষন দেখার সংগে সংগে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করুন ( আবারো বলছি দ্রুত চিকিৎসার কোন বিকল্প নেই)

চিকিৎসা
* inj: HICOMOX 1gm. (1gm/100kg body অনুযায়ী) ২৪ ঘন্টা পরপর ৩ দিন মাংশে দিতে হবে।
* Pow: MASTICARE PLUS. দিনে ২ বার ৫/৭ দিন খাওয়ান। (প্রথম দিন ৫০ মিঃগ্রাঃ করে ২ বারে ১০০ মিঃগ্রাঃ এবং পরের দিন থেকে ২৫ মিঃগ্রাঃ ২ বারে ৫০ মিঃগ্রাঃ খাবে।)
> দিনে ৪/৫ বার ওলানে ঠান্ডা পানি কমপক্ষে ১০/১৫ মিনিট করে দিন।
> প্রয়োজনে বরফ ব্যবহার করুন।
> প্রত্যেক বার পানি দেয়ার পর আক্রান্ত বাট ম্যাসেজ করুন এবং দুধ বের করে ফেলুন।
> ব্যাথা থাকলে ব্যাথানাশক ইনজেকশন kitoflam ব্যবহার করুন।

প্রতিরোধঃ-
> যতদুর সম্ভব গাভীর ঘড়ের মেঝে শুকনো, পরিষ্কার ও পরিছন্ন রাখুন।
> কমপক্ষে সপ্তাহে ২ বার (Isan, or Temsel, or Dettol, or Sarakill অথবা পটাশ) দিয়ে মেঝে ব্রাশ করে ধুয়ে ফেলুন।
> বাচ্ছা দেওয়ার ৫ দিন আগে থেকে শুরু করে এবং ৫ দিন পর পর্যন্ত Sub Clinical Mastitis ক্ষেত্রে Pow: Masticare Plus ২০ মিঃগ্রাঃ করে দিনে ২ বার খাওয়ানো।
> ওলানে যাতে আঘাত না পায় সেদিকে নজর রাখুন।
> আক্রান্ত গাভীকে ঝাড়-ফুঁক না দিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা।
> একই খামারের আক্রান্ত গাভীকে সবার শেষে দহন করা।
> দহন কারির হাত দুধ দহনের পুর্বে জীবানু নাশক লিকুইড দিয়ে ধুয়ে নেওয়া।
> বাচ্ছা প্রসবের ৩/৪ দিন বার বার দুধ দহন করা এবং দানাদার খাদ্য কম দেয়া, যাতে দুধের চাপ বেশি না থাকে।
> গর্ভাবস্থায় Antimastitis ঔষধ বাটে প্রয়োগ করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায় (চিকিৎসকের পরার্মশ অনুযায়ী)।
> প্রতিদিন একই সময়ে দুধ দহন করা।
> দুধ দহনের ৩০ মিনিট পর পর্যন্ত বাটের মুখ খোলা থাকে, যাতে এই সময়ের মধ্যে গাভী শুয়ে না পরে, এজন্য দহন শেষে দানাদার খাদ্য দেয়া।

বাটে রক্ত আসা (Bleeding from teat).
সাধারনত দুধ দহনের শেষে রক্ত অথবা গোলাপী রং এর দুধ আসলে বুঝতে হবে বাটে রক্ত আসা ( Bleeding from teat) রোগ হয়েছে। এ রোগ তুলনামুলক শাহীওয়াল গাভীতেই বেশি দেখা যায়।

কারন
= গাভীর শরীরের রক্তে ক্যালসিয়ামের অভাব হলে বাট দিয়ে রক্ত আসতে পারে।
= জীবানু ঘটিত কারনে এ রোগ হয়ে থাকে।

লক্ষন
= দুধ দহন কালে দুধের রং হালকা গোলাপী অথবা ফ্যাকাসে লাল দেখা যাবে।
= মাঝে মাঝে ভালো দুধ ও মাঝে মাঝে রক্ত মিশ্রিত দুধ আসতে পারে।
= ওলানে সামান্য ব্যাথা ও বাটের ভিতর কিছুটা শক্ত ভাব অনুভব হবে।
= আক্রান্ত বাটের টিস্যু বৃদ্ধি পাবে ও দুধ আসা বন্ধ হতে পারে।

রোগ নির্নয়
= ল্যাবে রক্ত পরীক্ষা করে বাটে রক্ত আসা (Bleeding from teat) রোগ নির্নয় করা যায়।

চিকিৎসা
= অ্যান্টিহিস্টামিনিকস ইনজেকশন ASTAVET দিয়ে (10% Dextrose saline সহযোগে Cofa-Calcium 250) ধীরে ধীরে রক্ত শিরায় দিতে হবে।
= inj: Dimidin প্রথম দিন ৪০সিঃসিঃ পরের ২ দিন ৩০সিঃসিঃ করে মাংশে অথবা শিরায় দিতে হবে।
= Pow: Rena-k দৈনিক ১০ গ্রাম করে ৫ দিন খাওয়াতে হবে।

প্রতিরোধ
= গাভীকে ক্যালসিয়াম সমুদ্ধ খাবার দিলে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
= দুধ দহন খুব জোরে না করে ধীরে ধীরে করতে হবে। যাতে করে ওলানে আঘাত না পায়।
= ওলানে যাতে কোন প্রকার সংক্রমন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।


বাটের ছিদ্র বন্ধ থাকা (Teat block).
অনেক সময় গাভী বাচ্চা দেয়ার পর বা দুধ প্রদানকালে বাটের ছিদ্র বিভিন্ন রোগের কারনে বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষ করে Mastitis, Bleeding from Teat, রোগের কারনে এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। আমাদের দেশে শংকর জাতের গাভীর চেয়ে শাহীওয়াল গাভীতেই এ রোগ বেশি হয়ে থাকে।

কারন
= ওলানে Fibrous growth, টিউমার, Cowpox, বাটে ক্ষত হলে।
= বাটে রক্ত আসা (Bleeding from teat) রোগ হলে।

লক্ষন
= দহনের জন্য টানলে দুধ বের না হয়ে ড্রপ করে দুধ উপড়ে উঠে যাবে।
= বাটের ছিদ্র ধীরে ধীরে চিকন হতে দেখা যাবে।
= দুধ দহনের সময় গাভী ব্যাথা অনুভব করবে।
= বাটের মাঝখানে টিউমার বা গিরা এর অস্তিত্ব পাওয়া যাবে।
= দহনের পরও দুর থেকে দেখে মনে হবে ওলানে দুধ টন টন করছে।

চিকিৎসা
* গাভীকে শুয়ে Teat syphon ঢুকিয়ে বাটের ছিদ্রপথ ক্লিয়ার করে দিতে হবে।
* ব্যাথা নাশক inj: kitoflam মাত্রাঅনুযায়ী ৫/৭ দিন মাংশে দিন।
* inj: Gentasone-5 দৈনিক ২৫ সিঃসিঃ করে ৭ দিন মাংশে দিতে হবে।

প্রতিরোধ
= গাভীকে স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে লালন পালন ও বাটে রক্ত আসা মাত্রই তাৎক্ষনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে হবে।
= নিয়মিত ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার সরবরাহ করলে এ রোগ হয় না।


Please wait for next post.
শেয়ার করে সাথেই থাকুন।

No comments

Powered by Blogger.