ভয়াবহ ক্ষুরা রোগ এবং ক্ষুর পঁচা রোগ সম্পর্কে জানুন ও সতর্ক হউন
ক্ষুর পঁচা রোগ (Foot-Rot)।
ক্ষুরা রোগ (FMD)
বর্তমান আমাদের দেশের খামারীদের সবচেয়ে বড় আতংকের নাম ক্ষুরা রোগ (Foot and Mought Disease / FMD)। এ রোগ এত বেশি ছোঁয়াছে যে বাতাস, পানি, কুকুর, মানুষ, গরু পরিবহন গাড়ি, এমনকি পরিধানের পোশাকের মাধ্যমে এক খামার থেকে আরেক খামারে সংক্রামিত করে। আর যে খামারে আক্রমন করবে সেই খামারের অবস্থা বারোটা বাজিয়ে ছাড়ে। বিশেষ করে দুধ খাওয়া বাচ্চার মৃত্যু অনিবার্য। রোগটি গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, তে হয়ে থাকলেও গরুতে সংক্রামিত সবচাইতে বেশি হয়। বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে যেমন...ক্ষুরপাকা, তাপরোগ, খুরুয়া, এঁসো, বাতান, জ্বরা নামে পরিচিত। ক্ষুরা (FMD) একটি ভাইরাস জনিত রোগ হওয়ায় পুর্ব সতর্কতা ও প্রতিষেধক টিকার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করা যায়।
ক্ষুরা (FMD) রোগের কারন
- Foot and Mought Disease Virus এ রোগের অন্যতম প্রধান কারন।
- নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা না দিলে।
- ক্ষুরা আক্রান্ত খামার পরিদর্শন করে ঐ অবস্থায় অন্য খামারে গেলে।
- ক্ষুরা আক্রান্ত গরুর সরন্জ্যামাদি সুস্থ গরুতে ব্যবহার করলে।
- অস্বাস্থ্যকর ও নোংড়া খামার ব্যবস্থাপনার কারনে হতে পারে।
- খামারের মধ্যে সব সময় কুকুর প্রবেশ করলে।
- FMD আক্রান্ত গরুর মাংশ ক্রয় করলে।
- গরুর হাট থেকে এসে জিবানুমুক্ত না হয়ে সরাসরি খামারে প্রবেশ করলে।
- যে খামারে ক্ষুরা আক্রান্ত হয়েছে সেই খামার পরিচর্যা কারি ব্যাক্তির সাথে সাময়িক চলাফেরা করলে।
ক্ষুরা (FMD) রোগের লক্ষন
- প্রথম দিকে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে (১০৫-১০৬) ডিগ্রী ফাঃ পর্যন্ত হবে এবং পা ঝাড়তে দেখা যাবে ও খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিবে।
- জিহ্বা ও পায়ের ক্ষুরের ফাকে ফোস্কা পড়বে। পরবর্তীতে ফোস্কা ফেটে ক্ষতের সৃষ্টি হলে মুখ দিয়ে সাদা ফেনার মত লালা ঝড়বে ও পা খুড়িয়ে হাটবে।
- মুখে ঘাঁয়ের জন্য কিছুই খেতে পারেনা আর পায়ের ক্ষতের ব্যাথায় দাড়িয়ে থাকতে পারেনা।
- অনেক সময় ফোস্কা নাকের ভিতর ও ওলানে দেখা দেয়।
- দুধের গাভীর দুধ উৎপাদন কমে যাবে। ক্ষুর দিয়ে রক্ত আসতে পারে।
- আকস্মিক ভাবে দুধ খাওয়া বাচ্চা মারা যাবে।
রোগ নির্নয়.
- ক্ষুরে ও মুখে ঘা, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, খাদ্য গ্রহন ছেড়ে দেয়ার লক্ষন দেখে এ রোগ নির্নয় করা যায়।
- FMD Virus এ সাতটি স্ট্রেন থাকায় ল্যাবরেটরীতে আক্রান্ত স্থানের Swab পরীক্ষা করে কোন স্ট্রেন দ্বারা এ রোগ হয়েছে তা নিশ্চিত করা যায়।
ক্ষুরা রোগের (FMD) চিকিৎসা
- লক্ষন দেখা মাত্রই আক্রান্ত গরুকে যত দ্রুত সম্ভব সুস্থ গরু থেকে আলাদা করে অন্যত্র সরিয়ে ফেলে সুস্থ গরু গুলোর জন্য আগে ব্যবস্থা নিন। যাতে করে খামারের সব গরু FMD রোগে আক্রান্ত হতে না পারে। আক্রান্ত গরুর পরিচর্যাকারী ব্যক্তি সুস্থ গরু পরিচর্যা করবেন না। আক্রান্ত গরু আলাদা করার পর সম্পুর্ন গরুর ঘড় জীবানুনাশক যেমন (Povisep, Povin, পটাশ মিশ্রিত পানি, ব্লিসিং পাউডার) দিয়ে দিনে কমপক্ষে ২ বার ধুয়ে নিন।
- স্প্রে Bioclean 100ml ২০ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিনে ৪/৫ বার গরুর পায়ে এবং ঘড়ের মেঝে, ওয়াল, বাহিরের চারিদিকে স্প্রে করুন।
- pow: NO FMD 100gm প্রত্যেক সুস্থ/অসুস্থ গরুকে ২০ গ্রাম করে দিনে ২ বার ১০ দিন খাওয়াতে হবে যাতে সু্স্থ গরু গুলো কে আক্রমন না করতে পারে।
- দুধের বাছুরকে আক্রান্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো বন্ধ রাখুন এবং প্রয়োজনে অন্য কোন সুস্থ্য গাভীর দুধ খাওয়ান।
আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা
- গর্ভবতী গাভীকে inj: TAXOVET-2gm (১ ভায়াল) দিনে ১ বার ৩ দিন মাংশে দিতে হবে। দুধের গাভীর জন্য inj: Demidin vet ৩০/৩৫ সিঃসিঃ করে শিরায়/ মাংশে ৫ দিন দিতে হবে।
- Sodi-carb FMD ওয়াশ দিয়ে দিনে ২বার মুখ ও জিহ্বা ধুয়ে দিন।
- পায়ের ক্ষত স্থান জীবানু নাশক লিকুইড Povin দিয়ে পরিষ্কার করে পাউডার Sumid vet দিনে ২ বার ব্যবহার করলে দ্রুত ঘা শুকিয়ে যায়।
- যদি মাছি ডিম দেওয়ার কারনে ক্ষত স্থানে পোকা পড়ে তাহলে চিমটা দিয়ে পোকা বের করুন অথবা ন্যাপথলিন গুড়া করে ক্ষত স্থানে গজ দিয়ে দিনে ২/৩ ঘন্টা করে বেধে রাখুন।
- মাছি যেন ক্ষত স্থানে বসতে না পারে এজন্য তারপিন ঘায়ের চারিদিকে লাগিয়ে রাখুন।
- ব্যাথা থাকলে inj: Kitovet-10 মাত্রানুযায়ী মাংশে দিতে হবে।
- অসুস্থকালিন সময় গরুকে নরম খাবার দিন এবং সর্বদা শুকনো ও পরিষ্কার স্থানে রাখুন।
প্রতিরোধঃ
- সুস্থ অবস্থায় প্রতি ৬ মাস পরপর ৪ মাস বয়স উর্ধ্ব সকল গরু বাছুরকে (FMD Vaccine) করালে FMD রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
- যেসব কারনে ক্ষুরারোগ (FMD) হয় সেই সম্পর্কে জেনে সতর্ক থাকুন।
পা পঁচা (Foot-rot) রোগ
গরুর পায়ের ক্ষুরের চারিদিকে ও ক্ষুরের মধ্যবর্তী স্থানের টিস্যু প্রদাহজনিত একটি জীবানু ঘটিত সংক্রামক রোগ। আঘাত জনিত ক্ষত অবস্থায় ভিজা, স্যাঁতসেঁতে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গরুকে রাখলে পা পঁচা (Foot-rot) রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সময়মত সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা না করলে গরুর পায়ের ক্ষুর খসে পড়ে ও স্থায়ী ভাবে খোড়া হয়ে যায়।
গরুর পায়ের ক্ষুরের চারিদিকে ও ক্ষুরের মধ্যবর্তী স্থানের টিস্যু প্রদাহজনিত একটি জীবানু ঘটিত সংক্রামক রোগ। আঘাত জনিত ক্ষত অবস্থায় ভিজা, স্যাঁতসেঁতে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গরুকে রাখলে পা পঁচা (Foot-rot) রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সময়মত সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা না করলে গরুর পায়ের ক্ষুর খসে পড়ে ও স্থায়ী ভাবে খোড়া হয়ে যায়।
পা পঁচা (Foot-rot) রোগের কারন
- Fusobacterium necrophorum নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া এ রোগের জন্য অন্যতম দায়ী।
- পায়ে ক্ষত অবস্থায় ভিজা স্যাঁতসেঁতে নোংরা পরিবেশে গরু লালন-পালন করলে।
পা পঁচা রোগের (Foot-rot) লক্ষন
- গরুর পায়ের গিরা ফুলে যাবে ও খুড়িয়ে হাটবে।
- অস্হি সন্ধিসহ বিভিন্ন স্থান ফুলে উঠতে দেখা যাবে।
- ক্ষত স্থান হতে পুঁজ বের হবে এবং দুর্গন্ধ করবে।
- দেহের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রী ফাঃ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- দাড়িয়ে থাকতে না পেরে অবশেষে বেশির ভাগ সময়ই শুয়ে থাকবে।
- চিকিৎসা দিতে বিলম্ব হলে ক্ষুর খসে পড়ে এবং গরু স্থায়ী ভাবে খোড়া হয়ে যায়।
চিকিৎসাinj: Astavet 20kg/1ml হিসাবে ৫/৭ দিন মাংশে দিন।
- inj: Otetra vet 100kg/10ml করে মাংশে ৫/৬ দিন দিতে হবে।
- liq: Povin দিয়ে দিনে ২ বার পরিষ্কার করে Sumid vet পাউডার দিলে দ্রুত ঘা শুকিয়ে যাবে।
- ক্ষত স্থানে যাতে মাছি না পরে এ জন্য ঘায়ের চারিদিকে তারপিন তেল লাগিয়ে রাখুন।
প্রতিরোধ.
- গরুর ক্ষুরে যেন আঘাত জনিত ক্ষত না হয় এ জন্য সতর্ক থাকুন।
- ক্ষুরে আঘাত প্রাপ্ত গরুকে সর্বদা শুকনো, পরিষ্কার ও জীবানু মুক্ত স্থানে রাখুন।

No comments