Header Ads

Header ADS

গরুর অতি তীব্র মারাত্নক তড়কা, গলাফুলা ও বাদলা রোগ সম্পর্কে জানুন ও সচেতন হউন

তড়কা (Anthrax).

গরুর অতি তীব্র মারাত্নক ব্যাকটেরিয়াল রোগ হলো তড়কা (Anthrax)। এ রোগের প্রচলিত নাম তড়কা, উবামড়কী, তীলাজ্বর, ধরকা বা গলি। গরুর এই তড়কা রোগ হলে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ থাকে না, তার আগেই মারা যায়। সাধারনত বর্ষাকালের প্রথম দিকে এই রোগের লক্ষন বেশি দেখা যায়।
কারনঃ-
>> Bacillus Anthracis নামক ব্যাকটেরিয়া এ রোগের জন্য দায়ী।

লক্ষনঃ-
>> বেশির ভাগ সময় কোন লক্ষন প্রকাশ পাওয়ার আগেই গরু মারা যায়। মারা যাওয়ার পর দ্রুত পেট ফেপে যাবে এবং বিভিন্ন ছিদ্রপথ (যেমনঃ নাক, মুখ, কান, মলদ্বার, যোনীদ্বার) দিয়ে আলকাতরার ন্যায় মরা রক্ত বের হতে থাকবে।
অল্প রোগের ক্ষেত্রে গরু ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত বেচে থাকে। আর এ সময় যে লক্ষন দেখা যায় তা হলো..........
>> অত্যাধিক জ্বর হয় এবং তাপমাত্রা ১০৭ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে থাকে।
>> শ্বাস কষ্ট হয় এবং দাত কট্ কট্ শব্দ করে।
>> শরীরের লোম খাড়া হবে ও পেট ফেঁপে যাবে।
>> গরুকে অনেক সময় উত্তেজিত হতে দেখা যাবে।
>> আক্রান্ত গরু মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে ও ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে শুয়ে পড়বে।
>> অবশেষে খিচুনী দিয়ে মারা যাবে।

চিকিৎসাঃ-
সুস্হ অবস্থায়.......
*** বছরে এক বার প্রতিষেধক টিকা হিসাবে (Anthrax Vaccine) চামড়ার নিচে দিতে হবে।
অসুস্থ অবস্থায়.....
*** inj: Streptopen 2.5 দৈহিক ১০০ কেজি বডি ওজন হিসাবে ১টি করে ভায়াল মাংশে/ শিরায় ২৪ ঘন্টা পর পর ৩/৫ দিন দিতে হবে।
অথবা........... 
*** inj: Pronapen vet 40 lakh মাংশ পেশীতে ১২ ঘন্টা পরপর দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

প্রতিরোধঃ-
*** প্রতিষেধক টিকা (Anthrax Vaccine) প্রয়োগ করে ১০০% এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। 
*** ৬ মাস বয়স উর্ধো সকল গরুকে বৎসরে একবার প্রতিষেধক টিকা (Anthrax Vaccine) প্রদান করতে হবে।
*** বর্ষার পানিতে জেগে উঠা কোন ঘাস গরুকে খাওয়ানো যাবে না।
*** তড়কা (Anthrax) আক্রান্ত মৃতঃ গরুকে কলিচুন সহযোগে ৬ ফুট মাটির নিচে গর্ত করে পুতে রাখতে হবে।
*** মৃতঃ গরুর ঘড় জীবানু নাশক (যেমনঃ povisep, Biocid, পটাশ, ব্লিসিং পাউডার) দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
*** মৃতঃ গরুকে Post mortem করা যাবে না এবং চামড়া ছাড়িয়ে নেয়া যাবে না।
গলাফুলা রোগ (Haemorrhagic Septicemia)
ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট, অত্যন্ত তীব্র সংক্রমক রোগ হলো গরুর গলাফুলা রোগ। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমনঃ গলঘট, গলবেরা, ব্যাংগা, ঘটু। সাধারনত বর্ষাকালে এ রোগের লক্ষন বেশি দেখা যায়।

কারনঃ-
>> পাসচুরেলা মাল্টোসিডা (Pasteurella Multocida) নামক ব্যাকটেরিয়া এ রোগের জন্য অন্যতম দ্বায়ী।
>> বর্ষাকালে টানা পরিশ্রম করানোর (যেমনঃ গরু দিয়ে জমি চাষ বা গাড়ী চালানো) কারনে এ রোগ হতে পারে।

লক্ষনঃ-
>> গরুর শরীরের তাপমাত্রা খুব বৃদ্ধি পেয়ে (১০৫-১০৭ ডিগ্রি ফাঃ) পর্যন্ত হয়।
>> গলা ফুলে থলথলে হয়ে ক্রমশ বুক পর্যন্ত ছরিয়ে পড়ে।
>> ফোলা স্থানে হাত দিলে গরম অনুভুত হয় এবং চাপ দিলে বসে যায় ও ব্যাথা পায়।
>> শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট ও নাড়ির স্পন্দন বেড়ে যায়।
>> অনেক সময় নাক মুখ ও চোখ দিয়ে পানির মত তরল পদার্থ বের হয়।
>> খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয় ও ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পরে।
>> শেষের দিকে পেট ব্যাথা ও রক্ত মিশ্রিত পায়খানা করে।
>> লক্ষন প্রকাশের ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই গরু মারা যায়। খুব অল্প সংখ্যক গরু ৩-৬ দিন পর্যন্ত বেচে থাকে।
>> মারা যাওয়ার সাথে সাথে পেট খুব ফুলে যায় এবং নাক ও মুখ দিয়ে তরল পদার্থ বের হতে থাকে।

চিকিৎসাঃ-
সুস্হ অবস্থায়
*** প্রতিষেধক হিসাবে গরুকে প্রতি ৮ মাস পর পর (H.S vaccine) টিকা চামড়ার নিচে দিতে হবে।

অসুস্থ অবস্থায়
*** inj: Astavet 10 cc দৈনিক এক বার করে মাংশে ৫/৭ দিন দিতে হবে।
*** inj: Renamycin-100 দৈহিক ১০০ কেজি বডি ওজনের জন্য ১০ সিঃসিঃ হিসাবে মাংশে ৫ দিন দিতে হবে।
*** বরিক পাউডার অথবা খাদ্য লবন অথবা Mag. Sulphete এর ২০০ গ্রাম নিয়ে কুসুম কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে ফোলা স্থানে দিনে ৪ বার সেক দিতে হবে।

প্রতিরোধঃ-
>> নিয়মিত ৮ মাস পরপর (H.S vaccine) দিয়ে ১০০% প্রতিরোধ করা যায়।
>> গরুকে অতিরিক্ত ঠান্ডা, বৃষ্টিতে, রোদ্রে একটানা পরিশ্রম করানো থেকে বিরত থাকুন।
>> আক্রান্ত গরুকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুস্থ গরু থেকে আলাদা রাখুন।
>> গরুর ঘড় জিবানু নাশক দিয়ে নিয়মিত ধুয়ে ফেলুন
বাদলা রোগ (Black Quarter B/Q).
বাংলাদেশে বৃষ্টির মৌসুমে বাদলা রোগ (BQ) অধিকহারে দেখা দেয়। মুলতঃ ৬ মাস থেকে ২০ মাস বয়সি বাড়ন্ত স্বাস্থ্যবান গরুতে এ রোগ বেশি আক্রমন হয়ে থাকে। এ রোগের প্রচলিত নাম হলো...... ব্লাক লেগ, তকালো রোগ, জহরবাত, সুজওরা, বুরবুরা রোগ, কোয়ার্টার ইভিল, কৃষ্ণাংগ, কোয়ার্টার ইল।
কারনঃ-
★ ক্লোস্ট্রিডিয়াম সোভাই (Clostridium Chauvoei) নামক এক ধরনের গ্রাম পজেটিভ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়।
লক্ষনঃ-
>> অতি তীব্র প্রকৃতির রোগে আক্রান্ত গরু হঠাৎ করে মারা যায়।
>> অল্প তীব্রভাবে রোগের ক্ষেত্রে প্রথমে তীব্র জ্বর (তাপমাত্রা ১০৫-১০৭ ডিগ্রী ফাঃ) হয়।
>> এ রোগ গরুর মাংশ পেশীতে বেশি আক্রান্ত হয় ফলে আক্রান্ত স্থান ফুলে যায় এবং গরম অনুভুত হয় ও ব্যাথা পায়।
>> ফোলা জায়গায় পচন ধরে ও চাপ দিলে পচ পচ শব্দ করে।
>> ফোলা স্থান অবশ হয়ে যায় ও দেখতে অপেক্ষাকৃত কালো দেখায়।
>> পায়ের মাংশ পেশিতে আক্রান্তের ফলে গরু খুড়িয়ে হাটে।
>> ফোলা স্থান কাটলে টক গন্ধযুক্ত বাতাস ও ফেনাযুক্ত তরল পদার্থ বের হয়।
>> আক্রান্ত গরুর কোষ্ঠ কাঠিন্যের ফলে পেট ফেপে যায় এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
>> শেষ পর্যায়ে গরুর শরীরের তাপমাত্রা কমে আসে। অরুচি, দুর্বলতা, অবশেষে গরু মারা যায়।
চিকিৎসাঃ-
সুস্হ অবস্থায়
* প্রতিষেধক হিসাবে প্রতি ৬ মাস পর পর বাদলা রোগের (B.Q vaccine) টিকা প্রদান করতে হবে।
অসুস্থ অবস্থায়.....
* inj: Astavet 10ml দৈনিক ৫ সিঃসিঃ করে দিনে ১ বার মাংশে দিতে হবে ৭ দিন।
* inj: Pronapen-40 lakh দিনে ২ বার। অর্ধেক মাত্রা মাংশ পেশীতে আর বাকি অর্ধেক মাত্রা আক্রান্ত স্থানে দিতে হবে।
* ফোলা স্থান কেটে দুর্গন্ধ যুক্ত রস ও বাতাস বের করে দিয়ে গজ ঢুকালে তাড়াতাড়ি ভালো হয়।
প্রতিরোধঃ-
★ বাদলা রোগের (B.Q vaccine) বাড়ন্ত বাছুরকে প্রতি ৬ মাস পর পর দিলে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
★ মৃতঃ গরুকে মাটির নিচে পুতে ফেলতে হবে এবং গোয়াল ঘড়ের মেঝে Iosan, povisep, Sarakill ইত্যাদি জিবানু নাশক দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
★ অসুস্থ গরুকে সুস্থ গরুর কাছ থেকে দ্রুত আলাদা করুন।

যদি পোষ্ট টির মাধ্যেমে আপনি একটু হলেও উপকার পেয়ে থাকেন তাহলে সেয়ার করবেন আমাদের এই পোষ্টটি। আর আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ...

No comments

Powered by Blogger.